সংগৃহীত
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর সংবাদ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করেছে বিদেশি গণমাধ্যমগুলো। প্রতিবেদনে তাঁকে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করার পাশাপাশি দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ক্ষমতা ও প্রতিরোধের এক বর্ণাঢ্য অধ্যায়ের কথা তুলে ধরা হয়েছে।
মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস তাদের প্রতিবেদনের শুরুতেই খালেদা জিয়াকে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কয়েক দশকের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা উল্লেখ করে বলা হয়, এই দুই নারীর নেতৃত্বে পরিচালিত রাজনীতি দক্ষিণ এশিয়ার এই রাষ্ট্রের গতিপথ নির্ধারণে বড় ভূমিকা রেখেছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা লিখেছে, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে খালেদা জিয়ার দ্বন্দ্ব ‘ব্যাটলিং বেগমস’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। প্রতিবেদনে বলা হয়, খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিন দশকের বেশি সময় ধরে চলা একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটল।
আল জাজিরা তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সামরিক বিদ্রোহে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হলে বাংলাদেশ গভীর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় পড়ে। একের পর এক অভ্যুত্থান ও পাল্টা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশ অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিএনপি কার্যত নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে।
স্বামী রাষ্ট্রপতি থাকাকালে খালেদা জিয়া সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন না। তবে জিয়ার মৃত্যুর পর বিএনপির শীর্ষ নেতারা দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে তাকেই রাজনৈতিক উত্তরাধিকার হিসেবে সামনে আনেন। এরই মধ্যে ১৯৮২ সালের মার্চে সেনাপ্রধান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখল করে সামরিক আইন জারি করেন।
এই অস্থির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে খালেদা জিয়ার উত্থান ঘটে। সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে তিনি ধীরে ধীরে একজন শক্তিশালী বিরোধী নেত্রী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান লিখেছে, সামরিক স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে আপসহীন অবস্থানের কারণে খালেদা জিয়া দ্রুত বড় সমর্থকগোষ্ঠী গড়ে তুলতে সক্ষম হন। ১৯৯১ সালে তিনি প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন এবং ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। একই বছরে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত নির্বাচনে জয়ী হয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় এলেও বিরোধীদের বর্জনের মুখে অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি পদত্যাগ করেন।
২০০১ সালে তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসেন খালেদা জিয়া। তবে এই মেয়াদে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসে। ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় ফেরার পর খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করা হয়।
বিবিসি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, শেখ হাসিনার প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে খালেদা জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের সবচেয়ে দৃশ্যমান প্রতীক হয়ে ওঠেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের প্রতিবাদে তিনি ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেন। পরবর্তীতে দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাবন্দি হন, যদিও তিনি এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছিলেন।
বিবিসি আরও লিখেছে, সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের পর যখন বাংলাদেশ আবার নির্বাচনের প্রস্তুতির পথে, ঠিক সেই সময়ে খালেদা জিয়ার জীবনাবসান হলো। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আসন্ন নির্বাচনে তার ভূমিকা নিয়ে আলোচনা চলছিল।
নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, জীবনের শেষ এক দশকে নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন খালেদা জিয়া। বার্ধক্যজনিত সমস্যার পাশাপাশি তিনি রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস এবং লিভারের গুরুতর রোগে আক্রান্ত ছিলেন। রাজনৈতিক মামলার কারণে তাকে কখনো কারাগারে, কখনো গৃহবন্দি অবস্থায় থাকতে হয়েছে।
খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর ভারত, পাকিস্তান, চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হয়েছে।
৪র্থ তলা, হাউজ# ২৭, রোড# ১ ব্লক# এ বনশ্রী , রামপুরা, ঢাকা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ ইয়াছিন মিয়া
নিউজ
ফোনঃ +880 1975681488
Email: sobarkothabdnews@gmail.com
বিজ্ঞাপণ
ফোনঃ +880 1975681488
Email: sobarkothabdnews@gmail.com
©️২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || sobarkotha.com