সংগৃহীত
শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন বণ্টন নিয়ে জটিলতায় পড়েছে জামায়াতে ইসলামী। এ কারণে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ আট দলের মধ্যে চলমান আসন সমঝোতার আলোচনা আশানুরূপ গতি পাচ্ছে না। কোন দল কোন আসনে প্রার্থী দেবে—এ নিয়ে মতবিরোধে আলোচনা বারবার থমকে যাচ্ছে।
আট দলের একাধিক সূত্র জানায়, গত ৯ ডিসেম্বর থেকে সোমবার (২২ ডিসেম্বর) পর্যন্ত তিনটি বিভাগের আসন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে দলগুলোর পক্ষ থেকে আগের মতোই বলা হচ্ছে, আরও দুই-তিন দিনের মধ্যে সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
যদিও ৩০০ সংসদীয় আসনে একক প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা চলছে, তবুও আট দল নিজেদের আনুষ্ঠানিক জোট হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে না। তারা এটিকে ‘আসন সমঝোতা’ বলেই উল্লেখ করছে। জামায়াতের একাধিক নেতা জানান, চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন ১৫০ আসনের একটি তালিকা দিয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ৫০টি, খেলাফত মজলিস ৩০টি এবং খেলাফত আন্দোলন ২৫টি আসনের দাবি জানিয়েছে। জাগপা ও বিডিপির দাবির তালিকা তুলনামূলকভাবে ছোট হলেও সব মিলিয়ে শরিকদের মোট দাবি দাঁড়াচ্ছে প্রায় ২৭০ আসন। ভবিষ্যতে আরও কয়েকটি দল এই সমঝোতায় যুক্ত হলে তাদের দাবিও যোগ হবে।
জামায়াতের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, আসন ছাড়তে তাদের আপত্তি নেই। তবে শরিকরা যেসব আসন দাবি করছে, সেসব এলাকায় অনেক দলের সাংগঠনিক অবস্থান জামায়াতের তুলনায় দুর্বল। ওইসব আসন ছেড়ে দিলে পরাজয়ের আশঙ্কা প্রায় নিশ্চিত। কিছু আসনে বিএনপি থেকে আসা নেতারা শরিক দলের প্রার্থী হতে চাইলে তা নিয়ে আপত্তি নেই বলেও জানান তিনি। তবে জাতীয় পার্টি থেকে আসা এবং আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত কয়েকজন নেতাকে জোটের প্রার্থী করা নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে।
আট দলের সূত্র অনুযায়ী, ইসলামী আন্দোলন শুরুতে ১৫০ আসনের তালিকা দিলেও বাস্তবে অন্তত ১২০ আসন ছাড় দাবি করছে। দলটি অতীতে কখনও সংসদে প্রতিনিধিত্ব পায়নি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাদের প্রাপ্ত ভোট ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৯৪ শতাংশ।
জামায়াতের আরেক জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, ১৯৯১ সালে ১২ শতাংশ এবং ১৯৯৬ সালে ৮ শতাংশ ভোট পাওয়ার পরও ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি জামায়াতকে ৩০টি আসন ছেড়ে দিয়েছিল। সে সময় সব শরিক মিলিয়ে ৫০ থেকে ৬০টি আসন ছাড়ার পরিকল্পনা ছিল।
চরমোনাই পীরের প্রস্তাব অনুযায়ী, ইসলামী আন্দোলন ১২০ আসনে এবং জামায়াত ১৩০ আসনে প্রার্থী দেবে, বাকি ৫০ আসন অন্যান্য দলকে ছাড় দেওয়া হবে। তবে এ প্রস্তাবে জামায়াত সম্মত হয়নি। গত অক্টোবরে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার শরিকদের ১০০ আসন ছাড়ার কথা বললেও এখন দলটি সেই বক্তব্যকে অনানুষ্ঠানিক হিসেবে দেখছে।
দলটির নেতারা জানান, দলীয় জরিপে দেখা গেছে—আগামী নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার সম্ভাবনা রয়েছে। শরিকদের সাংগঠনিক অবস্থাও যাচাই করা হয়েছে। এ অবস্থায় অতিরিক্ত আসন ছেড়ে দিলে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা নষ্ট হবে বলে তারা মনে করছেন।
আসন সমঝোতা আলোচনায় ইসলামী আন্দোলনের প্রতিনিধি ও দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, এখনও পাঁচটি বিভাগের আলোচনা বাকি রয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই সেগুলো শেষ হবে। ইসলামী আন্দোলন কতটি আসন চায়—এ প্রশ্নে তিনি বলেন, আলোচনা চলমান রয়েছে, শিগগিরই বিষয়টি জানানো হবে খেলাফত মজলিস ৫০টি আসনের দাবি জানিয়ে প্রতিটি জেলায় একজন করে প্রার্থী দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, তারা ২৫টির কম আসনে রাজি নন। খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন বলেন, যে আসনে যে দলের অবস্থান শক্ত, সেখানে সেই দলই প্রার্থী দেবে। তার দাবি, ৩০০ আসনেই আট দলের একক প্রার্থী থাকবে। দলের আমির মাওলানা মামুনুল হক ঢাকা-১৩ আসনে প্রার্থী হবেন।
২০১৮ সালে হবিগঞ্জ-৪ আসনে বিএনপি জোটের প্রার্থী ছিলেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমেদ আবদুল কাদের। এবার তিনি জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতায় রয়েছেন। প্রথমে ঢাকা থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী হলেও পরে হবিগঞ্জ-৪ এবং পরবর্তীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নির্বাচন করার আগ্রহ জানান তিনি।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নেওয়া খেলাফত আন্দোলনের নেতৃত্ব জুলাই অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বাদ দিয়ে দলটি জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। জামায়াত নেতারা জানান, আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়া কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার প্রশ্নই নেই।
জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, জয়ের বাস্তব সম্ভাবনা থাকলে আসন ছাড়তে সমস্যা নেই। তবে জয়ের সম্ভাবনা নেই—এমন আসন ছেড়ে দিলে আট দলেরই ক্ষতি হবে।
৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর ইসলামী আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন জাতীয় পার্টির কয়েকজন সাবেক নেতা। তাদের একজন কারি মো. হাবিবুল্লাহ বেলালী। তাকে ময়মনসিংহ-১০ আসনে প্রার্থী করতে চান চরমোনাই পীর। তার অতীত রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে জামায়াতের ভেতরে অস্বস্তির কথা জানিয়েছেন নেতারা।
আট দলের সমন্বয়ক ও জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, সব বিষয় নিয়েই আলোচনা চলছে। মনোনয়নপত্র দাখিলের আগেই ৩০০ আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করবে আট দল।
৪র্থ তলা, হাউজ# ২৭, রোড# ১ ব্লক# এ বনশ্রী , রামপুরা, ঢাকা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ ইয়াছিন মিয়া
নিউজ
ফোনঃ +880 1975681488
Email: sobarkothabdnews@gmail.com
বিজ্ঞাপণ
ফোনঃ +880 1975681488
Email: sobarkothabdnews@gmail.com
©️২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || sobarkotha.com