ঢাকা, ০১ জানুয়ারি, ২০২৬
নিউজ ডেস্ক :
প্রকাশিত : ১১:৩৪ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
Digital Solutions Ltd

গৃহিণী থেকে আপসহীন নেত্রী: বেগম খালেদা জিয়ার জীবন, সংগ্রাম ও শেষ বিদায়

প্রকাশিত : ১১:৩৪ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫

সংগৃহীত

নিউজ ডেস্ক :

মা–বাবার আদরের কন্যা খালেদা খানম। সেনা কর্মকর্তা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হওয়ার পর তিনি পরিচিত হন খালেদা জিয়া নামে। সংসারই ছিল তাঁর জগত—পুরোদস্তুর এক গৃহিণী। কিন্তু সময় ও ঘটনাপ্রবাহ তাঁকে গৃহিণী থেকে রূপান্তরিত করে তোলে দৃঢ় নীতি ও আদর্শে গড়া এক পরিণত রাজনীতিবিদে।

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অগ্রভাগে থেকে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া সেই খালেদা জিয়াই সময়ের সঙ্গে হয়ে ওঠেন দেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী। জনগণের ভালোবাসা, গ্রহণযোগ্যতা ও ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তায় তাঁর নামের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য হয়ে যায় ‘আপসহীন নেত্রী’ অভিধা।

৪৪ বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে নির্যাতন, হয়রানি, কারাবরণ—কোনো কিছুই তাঁকে নীতির প্রশ্নে মাথা নত করাতে পারেনি। সজ্জনতা, মিতভাষিতা, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও ব্যক্তিত্বগুণে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও তিনি স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করেছিলেন। দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে খালেদা জিয়া হয়ে ওঠেন বহুগুণে মহিমান্বিত এক রাষ্ট্রনায়ক।

গতকাল মঙ্গলবার ভোরে সেই আপসহীন নেত্রী সবাইকে কাঁদিয়ে পাড়ি জমালেন না–ফেরার দেশে। তবে তাঁর জীবনদর্শন, সংগ্রাম ও নীতি–আদর্শ বলছে—কর্মের মধ্য দিয়েই তিনি চিরভাস্বর ও অমর।

রাষ্ট্রপতির স্ত্রী থেকে সংগ্রামী নেত্রী

শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ড এক শোকস্তব্ধ নারীর জীবন আমূল বদলে দেয়। ব্যক্তিগত বেদনার পাহাড় বুকে নিয়েই ইস্পাতকঠিন মনোবলে রাজনীতির ময়দানে আবির্ভূত হন খালেদা জিয়া। রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব ও ব্যক্তিগত শোকের মাঝখানে দাঁড়িয়ে তিনি নিজেকে উৎসর্গ করেন গণতন্ত্রের লড়াইয়ে।

রাজনৈতিক সহযাত্রী, গবেষক ও বিশ্লেষকদের মতে, খালেদা জিয়ার জীবন কেবল ক্ষমতার গল্প নয়—এটি সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও অবিচল দৃঢ়তার এক অনন্য প্রতীক। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে তিনি একটি অধ্যায়, একটি সময়, একটি ইতিহাস।

মৃত্যুর ঘোষণা ও শেষ সময়

বাংলাদেশের আপসহীন নেত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুর খবর গতকাল ভোর ৬টায় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

এভারকেয়ার হাসপাতালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,
“এই সংবাদটা নিয়ে সবার সামনে দাঁড়াতে হবে ভাবিনি। আমরা ভেবেছিলাম, তিনি আবার সুস্থ হয়ে উঠবেন। আজ ভোর ৬টায় গণতন্ত্রের মা, আমাদের অভিভাবক আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন।”

মৃত্যুর সময় তাঁর পাশে ছিলেন বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। উপস্থিত ছিলেন তাঁর স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান, কন্যা জাইমা রহমান, প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি। পরিবারের অন্য সদস্যদের পাশাপাশি চিকিৎসক ও দলীয় নেতারাও সেখানে ছিলেন।

দেশজুড়ে শোক

খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে সারা দেশে নেমে আসে শোকের ছায়া। তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আজ বুধবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। বিএনপি ঘোষণা করেছে সাত দিনের শোক কর্মসূচি।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা শোক প্রকাশ করেছেন। বিএনপি কার্যালয়ে খোলা শোকবইয়ে স্বাক্ষর করেছেন কূটনীতিকরা।

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান শোকবার্তায় বলেন, বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে খালেদা জিয়ার ভূমিকা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

জানাজা ও দাফন

আজ দুপুর ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মাঠে বেগম খালেদা জিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজার ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররমের খতিব। জানাজা শেষে তাঁকে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধির পাশে দাফন করা হবে।

জানাজা ও দাফন ঘিরে ১০ হাজারের বেশি পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। পুরো আয়োজন পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হবে।

শোককে শক্তিতে রূপান্তরের ঘোষণা

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাবে দলটি। তাঁর নির্দেশিত পথ অনুসরণ করেই আগামী দিনের রাজনৈতিক কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে।

দীর্ঘ চিকিৎসা ও মৃত্যু

লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ফুসফুসসহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন খালেদা জিয়া। গত ২৩ নভেম্বর তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে টানা ৩৮ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল ভোরে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

জনৈতিক জীবনের সংক্ষিপ্ত টাইমলাইন

  • জন্ম: ১৫ আগস্ট ১৯৪৬, দিনাজপুর

  • বিএনপিতে যোগদান: ২ জানুয়ারি ১৯৮২

  • চেয়ারপারসন: ১৯৮৪–২০২৫

  • প্রধানমন্ত্রী: ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১

  • বিএনপি চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন: প্রায় ৪১ বছর

রাজনীতি বিভাগের অন্যান্য খবর

 Somoyer Kotha
Follow Us

৪র্থ তলা, হাউজ# ২৭, রোড# ১ ব্লক# এ বনশ্রী , রামপুরা, ঢাকা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ ইয়াছিন মিয়া

নিউজ
ফোনঃ +880 1975681488
Email: sobarkothabdnews@gmail.com

বিজ্ঞাপণ
ফোনঃ +880 1975681488
Email: sobarkothabdnews@gmail.com

©️২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || sobarkotha.com