ঢাকা, ০১ জানুয়ারি, ২০২৬
নিউজ ডেস্ক :
প্রকাশিত : ০৬:২০ এএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
Digital Solutions Ltd

বিদায়, মহাকাব্যিক বেগম খালেদা জিয়া

প্রকাশিত : ০৬:২০ এএম, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

সংগৃহীত

নিউজ ডেস্ক :

ঘর ছেড়ে রাজপথে নেমে আপসহীন সংগ্রামের পথ বেছে নিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের জনসমাবেশ ছড়িয়ে পড়েছিল সারাদেশে। সেই জনতার রায়েই একসময় তিনি পৌঁছে যান সংসদ ভবনে—রাষ্ট্রক্ষমতার কেন্দ্রে। সেখান থেকে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে পরিচিত করার প্রচেষ্টায় নিজেকে যুক্ত করেন।

সরকার থেকে বিরোধী দল, আবার বিরোধী দল থেকে সরকার—ক্ষমতার পালাবদলের মধ্য দিয়েই এগিয়েছে তার রাজনৈতিক জীবন। এরপর আসে ষড়যন্ত্র, এক-এগারো। আশির দশকের মতোই আবার শুরু হয় সংগ্রামের অধ্যায়। সেই পথে চলতে গিয়ে হারান বাড়ি-ঘর, হারান ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে। কারাগারে বন্দি অবস্থায় ধীরে ধীরে শরীরে বাসা বাঁধতে থাকে নানা রোগ। কিন্তু আপসহীন নেত্রীর অবস্থান বদলায়নি। মাথা নোয়াননি, করেননি আপস।

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে তিনি হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের জাতীয় ঐক্যের প্রতীক।

শরীরের সঙ্গে লড়াই, দেশের প্রতি অটল টান

শরীর ক্রমেই সায় দিচ্ছিল না। পরিবার ও দল সর্বোচ্চ চেষ্টা চালায় তাকে সুস্থ করে তুলতে। চলতি বছরের শুরুতেই উন্নত চিকিৎসার জন্য যান যুক্তরাজ্যে। সেখানে পরিবারের সান্নিধ্যে থেকে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি বেছে নেন দেশকে। একা থাকবেন, তবুও দেশের মাটিতেই।

দেশে ফেরার পথে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের বারবার অনুরোধ করেছিলেন—ছেলে তারেক রহমানকে দেখে রাখার কথা। যেন তিনি বুঝতে পারছিলেন, সময় ফুরিয়ে আসছে। আর নিজে ছেলেকে আগলে রাখতে পারবেন না। সেই দায়িত্ব তুলে দেন দলের নেতাকর্মীদের হাতে।

দেশে ফিরে এসেই তিনি নিজের কথার সত্যতা আবার প্রমাণ করেন। কারণ তিনি আগেই বলেছিলেন—
‘আমি দেশ ছেড়ে, দেশের মানুষকে ছেড়ে কোথাও যাব না। এই দেশই আমার একমাত্র ঠিকানা।’

এক-এগারো থেকে শুরু করে শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামল, এমনকি ফ্যাসিস্টমুক্ত সময়েও তিনি সেই অবস্থানে অটল ছিলেন। সুযোগ ছিল বিদেশে স্থায়ীভাবে থাকার, কিন্তু সে পথ বেছে নেননি। গোটা দেশ তার সাক্ষী।

শেষ বিদায়ে জনতার ঢল

খালেদা জিয়ার শেষ বিদায়ে সারাদেশ থেকে মানুষ ছুটে আসে ঢাকায়। সংসদ ভবন এলাকা পেরিয়ে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ হয়ে শাহবাগ, বিজয় সরণি, আগারগাঁও, শ্যামলী, নিউমার্কেট—সবখানেই ছিল মানুষের ঢল। জানাজাস্থল থেকে যতদূর চোখ যায়, শুধু মানুষ আর মানুষ।

এই জনস্রোতই স্পষ্ট করে দেয়—সাবেক প্রধানমন্ত্রী বা বিএনপি চেয়ারপারসনের পরিচয় ছাপিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন জাতির নেতা। অনেকের চোখ ছিল অশ্রুসজল। ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় ভিজে ওঠে রাজধানী।

প্রকৃতিও যেন বিদায়ের মুহূর্তে সঙ্গ দেয়। কয়েক দিনের কনকনে ঠান্ডা কাটিয়ে নগরীতে ওঠে মিষ্টি রোদ। কিছুটা স্বস্তি পায় আগত জনতা।

দুপুর দুইটায় জানাজা হওয়ার কথা থাকলেও মানুষের ভিড়ের কারণে কিছুটা বিলম্ব হয়। ঘড়ির কাঁটায় যখন ২টা ৪৫ মিনিট, জানাজাস্থলে পৌঁছায় খালেদা জিয়ার কফিন।

জানাজা ও রাষ্ট্রীয় সম্মান

দলের পক্ষ থেকে প্রথমে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি খালেদা জিয়ার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের নানা অধ্যায় তুলে ধরেন।

এরপর ২টা ৫৮ মিনিটে পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে কথা বলেন তারেক রহমান। মাতৃহারা সন্তানের কণ্ঠে ছিল আবেগ ও শোকের ভার। কোনো রাজনৈতিক ভাষণ নয়, আট-দশটি সাধারণ পরিবারের সন্তানের মতোই তার কণ্ঠ শোনা যায়—

‘মরহুমা যদি কারও কাছ থেকে কোনো ঋণ নিয়ে থাকেন, আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আমি তা পরিশোধ করব ইনশাআল্লাহ। তার কোনো কথায় বা আচরণে কেউ কষ্ট পেলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।’

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেকের ইমামতিতে জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়।

এই জানাজায় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস, দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা এবং বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। শোক জানাতে ঢাকায় আসেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তানের স্পিকার সরদার আয়াজ সাদিক, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা।

দক্ষিণ এশিয়ার নেতাদের এই উপস্থিতিই প্রমাণ করে—খালেদা জিয়া কেবল একটি দলের নেত্রী নন, তিনি এই রাষ্ট্রেরই এক ঐতিহাসিক নেতৃত্ব।

চিরনিদ্রায় জিয়া উদ্যানে

জানাজা শেষে খালেদা জিয়ার মরদেহ নেওয়া হয় জিয়া উদ্যানে। স্বামী শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়। তোপধ্বনির মাধ্যমে গান স্যালুট প্রদান করা হয়। সরকার ও তিন বাহিনীর প্রধানরা শ্রদ্ধা জানান।

নিরাপত্তাজনিত কারণে সমাধিস্থলে সীমিত মানুষের উপস্থিতি থাকলেও বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন অসংখ্য মানুষ—ফেরার পথে কবর জিয়ারত করবেন বলে।

এই মানুষই বলে দেয়—খালেদা জিয়া অমর হয়ে থাকবেন বাংলার মানসপটে। তিনি মিশে থাকবেন ধানের শীষে, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রেরণায়, রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাসে আর ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’-এর চেতনায়।

জাতীয় বিভাগের অন্যান্য খবর

 Somoyer Kotha
Follow Us

৪র্থ তলা, হাউজ# ২৭, রোড# ১ ব্লক# এ বনশ্রী , রামপুরা, ঢাকা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ ইয়াছিন মিয়া

নিউজ
ফোনঃ +880 1975681488
Email: sobarkothabdnews@gmail.com

বিজ্ঞাপণ
ফোনঃ +880 1975681488
Email: sobarkothabdnews@gmail.com

©️২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || sobarkotha.com