সংগৃহীত
১৯৮১ সালের ৩০ মে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক শোকাবহ অধ্যায়। ওই দিন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে নেমে আসে গভীর সংকট। সেই সংকটের ধারাবাহিকতায় ১৯৮২ সালে রাজনীতির ময়দানে পা রাখেন তার সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া। দলের প্রাথমিক সদস্য হিসেবে বিএনপিতে যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়েই নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা হয়।
রাজনীতিতে প্রবেশের পর খালেদা জিয়া এককভাবে নয়, পরিবারকেও এই পথচলায় সম্পৃক্ত করেন। দুই পুত্রের মধ্যেই তিনি রাজনীতির বীজ বপন করেন। বিশেষ করে জ্যেষ্ঠপুত্র তারেক রহমানের রাজনৈতিক বিকাশে তার সক্রিয় ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। চার দশকের বেশি সময় ধরে বিএনপির প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি ও আন্দোলনে তারেক রহমানের উপস্থিতি সেই বাস্তবতারই প্রতিফলন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, খালেদা জিয়া তারেক রহমানকে ধাপে ধাপে জাতীয় নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত করেছেন। দলের দুর্দিনে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন এবং নেতৃত্বের দৃঢ়তায় তারেক রহমান আজ বিএনপিকে আবারও ক্ষমতার কাছাকাছি নিয়ে গেছেন। মায়ের কাছ থেকে পাওয়া রাজনৈতিক শিক্ষা, দেশপ্রেম ও আপসহীনতা তারেক রহমানকে অন্যদের তুলনায় এগিয়ে রেখেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
বিএনপির রাজনৈতিক ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলেন খালেদা জিয়া। সেই আন্দোলনে মায়ের পাশে সক্রিয় ছিলেন তারেক রহমানও। ১৯৮৬ সালে রাজনৈতিক টানাপোড়েনের সময় মায়ের সঙ্গে গৃহবন্দি হন তিনি। পরে ১৯৮৮ সালে বগুড়ার গাবতলী উপজেলা বিএনপির সদস্য হিসেবে তার রাজনৈতিক অভিষেক ঘটে।
এরশাদ পতনের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে দেশজুড়ে প্রচারণায় মায়ের সঙ্গী ছিলেন তারেক রহমান। ওই নির্বাচনে বিএনপির বিজয়ের মাধ্যমে খালেদা জিয়া হন দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। এরপর ১৯৯৩ সালে বগুড়া জেলা বিএনপিতে গোপন ব্যালটে নেতৃত্ব নির্বাচন করে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দেন তারেক রহমান। ২০০২ সালে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্তে তিনি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হন। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান এবং ২০১৮ সালে মায়ের কারাবরণের পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন তিনি।
বিশ্লেষকদের ভাষায়, রাজনীতির ধৈর্য, সহনশীলতা ও কৌশলগত দিকগুলো মূলত মায়ের কাছ থেকেই শিখেছেন তারেক রহমান। দীর্ঘ ১৭ বছর প্রবাসে অবস্থান করেও তিনি দলীয় নেতৃত্ব ধরে রেখেছেন। সুদূর লন্ডন থেকে বিএনপিকে সংগঠিত রেখে রাজনৈতিক সংগ্রাম অব্যাহত রাখেন। দীর্ঘ দেড় দশক পর চলতি বছরের ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরলেও জীবনের সবচেয়ে বড় বেদনা নিয়ে ফিরতে হয় তাকে—রাজনীতির শিক্ষক ও মমতাময়ী মাকে হারানোর শোক।
খালেদা জিয়ার ইন্তেকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শোকবার্তা দেন তারেক রহমান। ফেসবুক স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন,
“আমার মা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, সর্বশক্তিমান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহি রাজিউন।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, দেশের কাছে খালেদা জিয়া ছিলেন আপসহীন নেত্রী ও গণতন্ত্রের প্রতীক। আর পরিবারের কাছে ছিলেন আত্মত্যাগী এক মমতাময়ী মা। স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আজীবন সংগ্রাম করেও তিনি পরিবারকে আগলে রেখেছেন আলো হয়ে।
তারেক রহমান লেখেন, খালেদা জিয়া দেশের জন্য স্বামী ও সন্তান হারিয়েছেন। ফলে দেশ ও দেশের মানুষই ছিল তার পরিবার। জনসেবা, ত্যাগ ও সংগ্রামের যে ইতিহাস তিনি রেখে গেছেন, তা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
শেষে তিনি দেশবাসীর কাছে মায়ের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া চেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
৪র্থ তলা, হাউজ# ২৭, রোড# ১ ব্লক# এ বনশ্রী , রামপুরা, ঢাকা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ ইয়াছিন মিয়া
নিউজ
ফোনঃ +880 1975681488
Email: sobarkothabdnews@gmail.com
বিজ্ঞাপণ
ফোনঃ +880 1975681488
Email: sobarkothabdnews@gmail.com
©️২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || sobarkotha.com