ঢাকা, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক :
প্রকাশিত : ০১:০৩ এএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
Digital Solutions Ltd

দুটি জোটেই সীমাবদ্ধ নির্বাচনী লড়াই, স্পষ্ট হলো রাজনীতির মেরুকরণ

প্রকাশিত : ০১:০৩ এএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫

দুটি জোটে বিভক্ত হয়ে পড়েছে দেশের রাজনীতি

নিজস্ব প্রতিবেদক :

  জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে ‘জোট গঠন’ নিয়ে আলোচনা, জল্পনা ও হিসাব-নিকাশ চলছিল, মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময়ের আগেই তার চূড়ান্ত রূপ স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বাস্তবে এখন দেশের রাজনীতি দুটি প্রধান নির্বাচনী জোটে ভাগ হয়ে গেছে। ফলে নির্বাচন কার্যত এই দুই জোটের মধ্যকার প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেই সীমাবদ্ধ থাকছে।

একটি জোট গঠিত হয়েছে বিএনপির নেতৃত্বে, অপরটি জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী দলগুলোর সমন্বয়ে। ক্ষমতার লড়াই ঘিরে এই মেরুকরণে রাজনৈতিক অঙ্গনে ভাঙা-গড়া, দল বদল এবং সমঝোতার নানা দৃশ্যও সামনে এসেছে।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটে মূলত ফ্যাসিবাদবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোই রয়েছে। নির্বাচনী কৌশলের অংশ হিসেবে এসব দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা নিজ নিজ দল ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দিয়ে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। এই জোটে সবচেয়ে আলোচিত সমঝোতা হয়েছে নিবন্ধিত ইসলামী দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সঙ্গে। দলটিকে চারটি আসন ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি।

দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক মিত্র হলেও এবার নির্বাচনে বিএনপির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে নামছে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন জোট। এই জোটে একাধিক ইসলামী দলের পাশাপাশি গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত তরুণদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) যুক্ত হয়েছে। শেষ মুহূর্তে কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপিও এই জোটে যোগ দেয়। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় এবারের নির্বাচনে মূল প্রতিযোগিতা যে এই দুই জোটের মধ্যেই হবে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সাংগঠনিক দিক থেকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট তুলনামূলকভাবে বেশি স্থিতিশীল। দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার অভিজ্ঞতা, আন্দোলনের ধারাবাহিকতা এবং শরিকদের সঙ্গে বোঝাপড়া—সব মিলিয়ে জোটটি বেশ সুসংগঠিত। বিপরীতে জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোট নতুন হওয়ায় তাদের ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করবে আসন সমঝোতা ও পারস্পরিক সমন্বয়ের ওপর।

বিএনপি ইতোমধ্যে তাদের শরিক দলগুলোর সঙ্গে আসন সমঝোতা চূড়ান্ত করেছে। যেসব দলের জাতীয় পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা ও নির্বাচনী সক্ষমতা রয়েছে, তাদের পছন্দ অনুযায়ী আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এর ফলে বগুড়া-২, ঢাকা-১২, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ ও পটুয়াখালী-৩ আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী না দিয়ে শরিকদের নিজ নিজ প্রতীকে নির্বাচনের সুযোগ দিয়েছে।

এ ছাড়া অনিবন্ধিত কয়েকটি দলের নেতাদের বিএনপিতে যোগদান করিয়ে ‘ধানের শীষ’ প্রতীক দেওয়া হয়েছে, যাদের সাংগঠনিক ভিত্তি তুলনামূলক দুর্বল হলেও জোটের ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এমনকি দুটি দল নিজেদের অস্তিত্ব বিলুপ্ত করে বিএনপিতে বিলীন হয়েছে।

বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন নিবন্ধিত কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতারাও। এর ফলে কিছু আসনে বিএনপির আগের মনোনীত প্রার্থীদের সরে দাঁড়াতে হচ্ছে। পাশাপাশি নিবন্ধিত জমিয়তের সঙ্গে চারটি আসনে চূড়ান্ত সমঝোতার ফলে ওই আসনগুলোতে বিএনপি কোনো প্রার্থী দেবে না।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে গঠিত জোটটি কয়েক মাস আগে গণভোট ও জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের দাবিতে একত্রিত হলেও নির্বাচন সামনে রেখে সেটি পূর্ণাঙ্গ নির্বাচনী জোটে রূপ নেয়। সর্বশেষ এনসিপি ও এলডিপি যুক্ত হওয়ায় এই জোটে দলের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দশে। জামায়াত দাবি করছে, সারা দেশের ৩০০ আসন নিয়ে তাদের মধ্যে সমঝোতা প্রায় সম্পন্ন।

জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান জানিয়েছেন, জোটের আসন সমঝোতা চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং মনোনয়ন জমার পর বাকি বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যাবে। একই সঙ্গে এনসিপির পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, তারা এই জোটের সঙ্গে থেকেই নির্বাচন করবে এবং জোটের বাইরে কোনো প্রার্থী দেবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান মনে করেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক মেরুকরণ স্বাভাবিক। আওয়ামী লীগ না থাকায় ক্ষমতার প্রতিযোগিতা মূলত দুটি জোটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হচ্ছে। তার মতে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট পুরোনো ও অভিজ্ঞ হওয়ায় তুলনামূলকভাবে বেশি শক্ত অবস্থানে রয়েছে, আর জামায়াতের নেতৃত্বাধীন নতুন জোটের টিকে থাকা নির্ভর করবে তাদের পারস্পরিক বোঝাপড়া ও আসন ভাগাভাগির দক্ষতার ওপর।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের আগে হঠাৎ দল বদল বা শুধু সংসদ সদস্য হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে জোট পরিবর্তনের প্রবণতা রাজনীতির সুস্থ সংস্কৃতির জন্য ইতিবাচক নয়। এই ভাঙা-গড়ার রাজনীতি দীর্ঘমেয়াদে রাজনৈতিক আদর্শ ও বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

রাজনীতি বিভাগের অন্যান্য খবর

 Somoyer Kotha
Follow Us

৪র্থ তলা, হাউজ# ২৭, রোড# ১ ব্লক# এ বনশ্রী , রামপুরা, ঢাকা।

সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ ইয়াছিন মিয়া

নিউজ
ফোনঃ +880 1975681488
Email: sobarkothabdnews@gmail.com

বিজ্ঞাপণ
ফোনঃ +880 1975681488
Email: sobarkothabdnews@gmail.com

©️২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || sobarkotha.com