ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি (ফাইল ছবি)
জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে জাতীয় রাজনীতিতে পরিচিত হয়ে ওঠেন শরিফ ওসমান হাদি। জুলাই শহীদদের অধিকার আদায়, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী রাজনৈতিক অবস্থানের কারণে অল্প সময়েই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন তরুণ এই নেতা। তার হত্যাকাণ্ড পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছে।
শরিফ ওসমান হাদি জন্মগ্রহণ করেন ১৯৯৩ সালের ৩০ জুন, ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলায়। মাদরাসা শিক্ষক বাবা মাওলানা আব্দুল হাদি ও গৃহিণী তাসলিমা হাদির ছয় সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। সীমিত আয়ের পরিবারের টিনশেডের ছোট ঘরেই কেটেছে তার শৈশব।
এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, ছোটবেলা থেকেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছিলেন হাদি। তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু নলছিটি ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায়। পরে ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদরাসা থেকে দাখিল ও আলিম সম্পন্ন করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন।
রাজনৈতিক সংগ্রামের পাশাপাশি সাহিত্যচর্চায়ও সক্রিয় ছিলেন হাদি। ‘সীমান্ত শরিফ’ ছদ্মনামে তিনি কবিতা লিখতেন। তার লেখায় উঠে এসেছে শোষণ, নিপীড়ন ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
২০২৪ সালে দুয়ার প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয় তার কাব্যগ্রন্থ ‘লাভায় লালশাক পুবের আকাশ’, যা পাঠকমহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। রাজনৈতিক ফ্যাসিবাদের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধেও তার অবস্থান ছিল স্পষ্ট।
পেশাগত জীবনে হাদি ইংরেজি ভাষার শিক্ষক ছিলেন। সর্বশেষ তিনি ইউনিভার্সিটি অব স্কলারস নামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছিলেন। ঢাকার রামপুরা এলাকায় বসবাসকালে ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন এবং স্থানীয় সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন।
জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতার অভিজ্ঞতা ও দাবির ভিত্তিতে ২০২৪ সালের ১৩ আগস্ট হাদির নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ইনকিলাব মঞ্চ। সংগঠনটির লক্ষ্য ছিল—সব ধরনের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠন।
ইনকিলাব মঞ্চ গঠনের পর হাদি জুলাই শহীদদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি, অপরাধীদের বিচার এবং জুলাই চার্টার ঘোষণার দাবিতে সরব ভূমিকা রাখেন। এসব দাবিই তাকে জাতীয় রাজনৈতিক আলোচনায় নিয়ে আসে।
ইনকিলাব মঞ্চের ব্যানারে দেশব্যাপী গ্রাফিতি ও স্লোগান পুনর্লিখন, শহীদি সপ্তাহ পালন, অনশন, ছবি প্রদর্শনী, ভিডিও ডকুমেন্টেশন, শহীদি স্মৃতিকথা, গণসেজদা ও দ্রোহের গান—বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনকে ভিন্ন মাত্রা দেন হাদি।
রাজনৈতিক জীবনের একপর্যায়ে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দেন। আসন্ন নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার কথা জানান। প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে ‘চা–সিঙাড়া আড্ডা’, সরাসরি মতবিনিময় ও জনগণের পরামর্শ অনুযায়ী ইশতেহার তৈরির ঘোষণা তাকে নাগরিক সমাজে জনপ্রিয় করে তোলে।
নির্বাচনী প্রচারণায় মুড়ি-বাতাসা বিতরণ, ফজরের নামাজের পর লিফলেট বিতরণ, ডোনেশনের মাধ্যমে ফান্ড সংগ্রহ এবং খরচের হিসাব প্রকাশ—সব মিলিয়ে তিনি রাজনীতিতে এক ব্যতিক্রমী চরিত্রে পরিণত হন। এমনকি এক ভিডিওতে প্রচারণার সময় একজন সমর্থক তার পকেটে টাকা ঢুকিয়ে দিচ্ছেন—এই দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে ব্যাপক আলোড়ন তোলে।
৪র্থ তলা, হাউজ# ২৭, রোড# ১ ব্লক# এ বনশ্রী , রামপুরা, ঢাকা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ ইয়াছিন মিয়া
নিউজ
ফোনঃ +880 1975681488
Email: sobarkothabdnews@gmail.com
বিজ্ঞাপণ
ফোনঃ +880 1975681488
Email: sobarkothabdnews@gmail.com
©️২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || sobarkotha.com