গোয়েন্দা তদন্তে উঠে এসেছে হাদি হত্যা চেষ্টার বিস্তারিত নকশা (ফাইল ছবি)
গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যেই দেশ ছাড়েন মূল অভিযুক্ত ফয়সাল। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ আলামতও গায়েব করা হয় বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ফিলিপের দুই সহযোগীর জবানবন্দিতে জানা যায়, ভুটিয়াপাড়া সীমান্ত দিয়ে ফয়সাল ও তার সহযোগী ভারতে পালিয়ে যান। সময় টিভির হাতে আসা তথ্য অনুযায়ী, শ্যুটার ফয়সালের মোবাইল ফোনের আইপি অ্যাড্রেস বিশ্লেষণে বুধবার তার অবস্থান ভারতের মহারাষ্ট্রে শনাক্ত হয়েছে। তিনি সেখানে ভারতের রিলায়েন্স কোম্পানির একটি সংযোগ ব্যবহার করে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানা গেছে।
প্রধান দুই আসামি পলাতক থাকলেও তদন্তে পুরো হত্যাচেষ্টার ছক উন্মোচিত হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্য বলছে, গত জুলাই মাসে দেশে ফিরে ফয়সাল কবির, কামাল, রুবেল ও মাইনুদ্দিনসহ কয়েকজনকে নিয়ে ‘কিলিং মিশন’-এ নামে। তদন্তে উঠে এসেছে, তারা সবাই কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নেতা।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গত ৪ ডিসেম্বর রাত ৮টা ১৮ মিনিটে বাংলামোটরের ইনকিলাব কালচারাল সেন্টারে আসে ফয়সাল ও তার সহযোগী কবির। প্রায় ছয় মিনিটের ওই বৈঠক ছিল হাদির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরির প্রথম ধাপ। সেখানে ফয়সাল হাদির সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে।
এরপর ৯ ডিসেম্বর রাতে আবার কালচারাল সেন্টারে আসে ফয়সাল। এবার তার সঙ্গে কবির না থাকলেও নতুন সহযোগী হিসেবে ছিলেন আলমগীর। ওই বৈঠকে নির্বাচনী প্রচারণার পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্য দিয়েই ফয়সাল হাদির প্রচারণা টিমে ঢুকে পড়ে। পরদিন ১২ ডিসেম্বর সেগুনবাগিচায় হাদির প্রচারণায় সরাসরি অংশ নেয় সে।
প্রচারণায় যুক্ত হওয়ার পরই হাদিকে হত্যার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ফয়সাল। মিশন বাস্তবায়নের আগে নরসিংদী, সাভার ও মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় রেকি করা হয়। ১১ ডিসেম্বর প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ফয়সাল পশ্চিম আগারগাঁওয়ে তার বোনের বাসায় অবস্থান নেয়।
হামলার দিন ভোরে উবারে করে হেমায়েতপুরের একটি রিসোর্টে যায় ফয়সাল। রিসোর্টের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ভোর ৫টা ২২ মিনিটে ফয়সাল ও আলমগীরের গাড়ি গ্রিন জোন রিসোর্টে প্রবেশ করে। সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিল ফয়সালের বান্ধবী মারিয়া ও তার বোন। তদন্ত সূত্র জানায়, সেখানে হাদির একটি ভিডিও দেখিয়ে ফয়সাল জানায় যে সে হাদির মাথায় গুলি করার পরিকল্পনা করেছে এবং এতে দেশে বড় ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি হবে। ঘটনার পর তার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়।
পরে উবারের গাড়িতে করে বান্ধবীকে বাড্ডায় নামিয়ে দেয় ফয়সাল। সকাল ১১টা ৫ মিনিটে আগারগাঁওয়ের বাসা থেকে মোটরসাইকেলে বের হয় ফয়সাল ও আলমগীর। তারা সরাসরি হাদির সেগুনবাগিচার প্রচারণায় যোগ দেয়। সকাল পৌনে ১২টার দিকে সেখানে পৌঁছায় তারা।
প্রচারণা শেষে দুপুর ১২টা ২২ মিনিটে হাদি মতিঝিলের উদ্দেশ্যে রওনা হলে ফয়সাল ও আলমগীর পেছন থেকে তার অটোরিকশা অনুসরণ করে। দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে অটোরিকশাটি মতিঝিলের জামিয়া দারুল উলুম মসজিদের সামনে পৌঁছালে আলমগীর মোটরসাইকেল পার্ক করে। এরপর দুজনই আবার প্রচারণায় যুক্ত হয়।
হাদি মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে সেখানে প্রচারণার কথা ছিল। দুপুর ২টা ১৬ মিনিটে হাদি মসজিদ এলাকা ত্যাগ করলে ফয়সালরা আবার পিছু নেয়। উল্টো পথে শাপলা চত্বর হয়ে দৈনিক বাংলা মোড়ে ঘুরে পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে প্রবেশ করে তারা। প্রায় আড়াই ঘণ্টা উপযুক্ত সুযোগ খোঁজার পর দুপুর ২টা ২৪ মিনিটে খুব কাছ থেকে হাদিকে লক্ষ্য করে দুটি গুলি ছোড়ে ফয়সাল।
এই ঘটনার পর তদন্তকারী সংস্থাগুলো অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা জোরদার করেছে।
৪র্থ তলা, হাউজ# ২৭, রোড# ১ ব্লক# এ বনশ্রী , রামপুরা, ঢাকা।
সম্পাদক ও প্রকাশক: মোঃ ইয়াছিন মিয়া
নিউজ
ফোনঃ +880 1975681488
Email: sobarkothabdnews@gmail.com
বিজ্ঞাপণ
ফোনঃ +880 1975681488
Email: sobarkothabdnews@gmail.com
©️২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || sobarkotha.com