ঢাকা, ২৯ জুন, ২০২৪
সবারকথা ডেষ্ক :
Publish : 07:15 AM, 29 June 2024.
Digital Solutions Ltd

পদ্মার চরে রাসেলস ভাইপার: পায়ে পায়ে কৃষকের মৃত্যু!

Publish : 07:15 AM, 29 June 2024.
পদ্মার চরে রাসেলস ভাইপার: পায়ে পায়ে কৃষকের মৃত্যু!

পদ্মার চরে রাসেলস ভাইপার: পায়ে পায়ে কৃষকের মৃত্যু!

সবারকথা ডেষ্ক :

ফরিদপুরের চরাঞ্চলে আতঙ্কের নতুন নাম ‘রাসেলস ভাইপার’। এ সাপের ভয়ে বাদাম তোলার জন্য কোনো শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে জীবনের মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে জমির মালিকরাই বাদাম তুলছেন। 

 

বুধবার (১৯ জুন) দুপুরে সদর উপজেলার নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের পদ্মার চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা যায়, জেগে উঠা ধু ধু বালুচরে বাদাম তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কিষান-কিষানিরা। ফরিদপুর সদর, চরভদ্রাসন ও সদরপুরের চরাঞ্চলের বেলে মাটি বাদাম চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তবে এ বছর প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের কারণে ফলন আশানুরূপ হয়নি। 

 

 

সম্প্রতি পদ্মার পানি বেড়ে গিয়ে বাদাম ক্ষেতে ঢোকায় অপরিপক্ব বাদামও তুলতে হচ্ছে। এতে পুরুষের চেয়ে নারীদেরই বেশি দেখা যায়। প্রথমে ক্ষেত থেকে বাদাম তোলা হচ্ছে; এরপর ক্ষেতেই গাছ থেকে বাদাম কাটা হচ্ছে। তারপর নৌকায় করে নদী পার হয়ে বাদাম নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বাড়িতে।

 

 

বাদাম চাষি আনোয়ার হোসেন জানান, বাদাম লাগানোর সময় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা মণ দরে বাদাম কিনে লাগাতে হয়েছে। প্রতি বিঘাতে খরচ হয়েছে ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা। বিঘায় উৎপাদন হওয়ার কথা ছিল ১০ থেকে ১৫ মণ; কিন্তু এ বছর ফলন হয়েছে ৫ থেকে ৮ মণ। দাম ভালো না পেলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তারা।

 

এদিকে, সম্প্রতি চরাঞ্চলে রাসেলস ভাইপারের উপদ্রব বেশি হওয়ায় ভয়ে অনেকেই ক্ষেতে যাচ্ছেন না। বাদাম তুলতে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে জমির মালিকরাই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্ষেতে নেমে পড়ছেন।

 

বাদাম চাষি ছালাম শেখ বলেন, ‘সম্প্রতি রাসেলস ভাইপারের উপদ্রব বেড়ে গেছে। গত দুমাসে সাপের কামড়ে মারা গেছে তিনজন। এ কারণে কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। ভয়ে কেউ ক্ষেতে নামতে চাইছে না। বাধ্য হয়ে নিজেদেরই বাদাম তুলতে হচ্ছে।’

 

 

তিনি আরও বলেন, ‘চরাঞ্চলের মানুষের অন্যতম আয়ের উৎস্য বাদাম চাষাবাদ। এর ওপরই সারা বছরের সংসার খরচ চলে। সে কারণে ঝুঁকি নিয়েই বাদাম তুলতে হচ্ছে।’

 

 

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ক্ষেতে বাদাম তুলতে এসেছেন আসমা আক্তার। তিনি বলেন, ‘প্রচণ্ড দাবদাহে এমনিতে বাদামের ফলন এ বছর ভালো হয়নি; তার ওপর আবার পদ্মার পানি বাড়ায় ক্ষেতে ঢুকে গেছে। এতে অপরিপক্ব বাদাম তুলে ফেলতে হচ্ছে। এখন যাও পাওয়া যাবে, পানিতে ডুবে গেলে কিছুই পাওয়া যাবে না। তাই স্বামীর সঙ্গে বাদাম তুলতে এসেছি।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘সাপের ভয়ে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। অনেককে বলেছি; কিন্তু কেউ রাজি হয়নি। এ কারণে পরিবারের সবাই মিলে বাদাম তুলছি। কী করব, বাদামই আমাদের একমাত্র অবলম্বন। তাও এবার ফলন ভালো না হওয়ায় মন খারাপ। তবে দাম যদি একটু বেশি পাই তাহলে লোকসান হবে না। বাদাম থেকে যা আয় হয়, তা দিয়েই সারা বছর সংসার চলে।’

 

 

করিমন বেগম বলেন, ‘আমি মানুষের বাড়িতে গিয়ে কাজ করি। বাদাম তোলার সময় প্রতি বছরই এ কাজ করি; বেতন ভালো পাই। এ বছরও বাদাম তুলতে আইছি, কিন্তু ভয় লাগে সাপের।’ তারপরও এসেছেন কেন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাড়িতে কাজ করার চেয়ে টাকা পাই, তাই আইছি। বয়স হয়েছে, আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে আইছি। যদি সাপের কামড়ে মরে যাই যাব; কিন্তু কাজে না এলে খাব কী, চলব কীভাবে! ঘরে বসে থাকলে তো আর কেউ খাবার দেবে না। দুমুঠো খাবারের জন্যই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাদাম ক্ষেতে এসেছি।’

 

 

ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদি হাসান মিন্টু বলেন, ‘দাবদাহের কারণে বাদাম এবং তিলের ফলন ভালো হয়নি। পাশাপাশি পদ্মার পানি বাড়ায় তীববর্তী এলাকার বাদাম ক্ষেতে পানি ঢুকেছে। তাড়াহুড়ো করেই বাদাম তুলে ফেলতে হচ্ছে চাষিদের। এছাড়া আরেকটি সমস্যা -- রাসেল ভাইপারের কারণেও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। চরাঞ্চলের বেশ কয়েকজন সাপের কামড়ে মারা যাওয়ায় অনেকে ভয়ে ক্ষেতে যেতে চাচ্ছে না।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিজে যখন চরাঞ্চলে যাই, তখন নিজেও ভয়ে ভয়ে থাকি। রাসেল ভাইপার এমনিতে দেখা যায় না। হঠাৎ করেই চলে আসে। অন্য সাপ মানুষ দেখলে পালিয়ে যায়; কিন্তু রাসেলস ভাইপার মানুষ দেখলে এগিয়ে আসে। আমরাও খুব চিন্তিত। উপজেলার মাসিক সভায় বিষয়টি সবাইকে অবগত করব।’

 

 

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জেলায় এ বছর ৪ হাজার ৫৭২ হেক্টর জমিতে বাদামের আবাদ হয়। উৎপাদন হয়েছে ৮ হাজার ২২৯ মেট্রিক টন, যার বাজার মূল্যে ৮২ কোটি টাকার মতো।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘যারা আগাম বাদাম লাগিয়েছিলেন তাদের তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। তবে পরে যারা বাদাম লাগিয়েছেন পদ্মার পানি বাড়ায় তাদের কিছুটা ক্ষতি হতে পারে। অবশ্য তা হবে খুবই সামান্য। চাষিদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে, বৃষ্টির মধ্যে যাতে বাদাম না তোলে। রোদের মধ্যে বাদাম তুললে কালারটা ভালো থাকবে। এছাড়া রাসেল ভাইপার থেকে বাঁচতে কৃষকদের ক্ষেতে মশার কয়েল জ্বালিয়ে কাজ করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কারণ ধোঁয়া সাপের চোখে গেলে সেখান থেকে দ্রুত তারা সরে যায়। কৃষকরা এ পদ্ধতি ব্যবহার করে সফলও হচ্ছে। তাছাড়া চাষিদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে।’

বাংলাদেশ বিভাগের অন্যান্য খবর

 Somoyer Kotha
Follow Us

৪র্থ তলা, হাউজ# ২৭, রোড# ১ ব্লক# এ বনশ্রী।

সম্পাদক
মোজাম্মেল দিলন

প্রকাশক
সবার কথা মিডিয়া লিমিটেড
সবার কথা মিডিয়া লিঃ এর একটি প্রতিষ্ঠান।

নিউজ
ফোনঃ +৮৮ ০২২২৪৪০৬০৭০
Email: [email protected]

বিজ্ঞাপণ
ফোনঃ +৮৮ ০২২২৪৪০৬০৭০
Email: [email protected]

©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || sobarkotha.com

শিরোনাম ইন্টারনেট প্যাকেজ সাশ্রয়ী করা হবে : তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী শিরোনাম ভারতের সঙ্গে কোনো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিরোনাম ফিরলেন ২৮ হাজার ৯৪১ হাজি, সৌদিতে মৃত্যু ৫৪ জনের শিরোনাম দুই মাস ৮ দিন পর পুনরায় চালু হলো সাবমেরিন কেবল শিরোনাম নয়াপল্টনে সমাবেশ শুরু করেছে বিএনপি শিরোনাম রায়পুরায় সুমন হত্যার জের ধরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ.আহত ৪