নিরাপদ ও জনগণের অধিকারভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণের স্বপ্নে এগিয়ে যাচ্ছে নতুন রাজনৈতিক শক্তি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জোর দিয়ে বলেছেন, অতীতের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবারের জুলাই গণঅভ্যুত্থান যেন ব্যর্থ না হয়, সেই চেষ্টাই হবে তাদের প্রধান রাজনৈতিক অঙ্গীকার। তিনি মনে করেন, এই আন্দোলন শুধু সরকারের পরিবর্তন নয়, বরং রাষ্ট্র কাঠামোর মৌলিক সংস্কারের লক্ষ্যেই গঠিত হচ্ছে।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে নাহিদ ইসলাম এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে যে গণঅভ্যুত্থানের সূচনা হয়েছে, তা দেশের ইতিহাসে এক গৌরবময় মোড় ঘুরিয়ে দেয়। এই গণঅভ্যুত্থান জনগণের দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভ ও আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ। এর পেছনে রয়েছে ৯০-এর অভ্যুত্থানের অভিজ্ঞতা ও ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধ। তাই নাহিদ ইসলাম মনে করেন, এবার এই আন্দোলন ব্যর্থ হলে জাতি আরেকটি বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হবে।
নাহিদ বলেন, এনসিপি গঠিত হয়েছে এই গণআন্দোলনের ধারাবাহিকতায়। এটি তরুণদের উপর ভর করে গড়ে ওঠা এক নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম, যার মূল শক্তি দেশের তরুণ প্রজন্ম। তিনি বলেন, এনসিপি চায় এমন একটি রাষ্ট্র যেখানে ফ্যাসিবাদ, দলীয়করণ ও স্বৈরতন্ত্রের কোনো স্থান থাকবে না। দলটির রাজনৈতিক দর্শন হলো—ক্ষমতার মুখ বদল নয়, বরং রাষ্ট্রের কাঠামোতে মৌলিক পরিবর্তন আনা। এজন্য সংবিধান, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা, বিচারব্যবস্থা ও নির্বাচন ব্যবস্থায় রূপান্তর জরুরি বলে তারা মনে করে।
তিনি জানান, এনসিপি সংস্কারের নামে কোনো কসমেটিক পরিবর্তন নয়, বরং মূলগত গুণগত পরিবর্তনের পক্ষপাতী। তাদের মতে, যেভাবে বিগত শাসনকালগুলোতে সংবিধানকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক শাসন কাঠামোর অধীনে আনা হয়েছে, তা বন্ধ করতেই হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে যেসব প্রস্তাবনা এসেছে, তা তারা ইতোমধ্যে পর্যালোচনা করেছে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একমত হয়েছে। যেসব বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে, সেগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ আজকের সংলাপে তৈরি হয়েছে।
শেষে নাহিদ ইসলাম বলেন, এই মুহূর্তে জাতীয় ঐকমত্য সবচেয়ে বেশি জরুরি। কারণ, এই সুযোগ যদি হারিয়ে যায়, তাহলে আবারও বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদ ও স্বৈরতন্ত্রের দুঃস্বপ্নে ফিরে যেতে পারে। তাই সবাইকে নিয়ে ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংবিধান ও রাষ্ট্র সংস্কারে একত্রে কাজ করাই এখন সময়ের দাবি। উপস্থিত ছিলেন এনসিপির গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ, যারা সবাই এই লক্ষ্য পূরণে একযোগে কাজ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।