ঢাকা, ১২ জুলাই, ২০২৫
আতিকুর রহমান, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: :
প্রকাশিত : ১২:৩৬ পিএম, ০৮ জুলাই ২০২৫
Digital Solutions Ltd

-নিজের কথা না ভেবে মা ছেলের জন্য দিনরাত পরিশ্রম করছে জমিনা

প্রকাশিত : ১২:৩৬ পিএম, ০৮ জুলাই ২০২৫

আতিকুর রহমানের পাঠানো ছবি

আতিকুর রহমান, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: :

জীবনের কাছে হার মানেনি তারা, কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে বারবার অবহেলার শিকার। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া গ্রামে বসবাস করা একটি পরিবারের প্রতিটি দিনই যেন দুঃখের উপাখ্যান। একদিকে জন্মগত প্রতিবন্ধী ছেলে, অন্যদিকে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন শয্যাশায়ী বৃদ্ধা মা। এ দুই জনের সেবায় নিজেই অসুস্থ মেয়ে দিনরাত পরিশ্রম করছেন, অথচ তার নিজের শরীরেও নেই চলার শক্তি।

পরিবারটির করুণ চিত্র এখন যেন গোটা অঞ্চলের বিবেককে নাড়া দিচ্ছে। এক চিলতে জমি, জরাজীর্ণ কুঁড়েঘর, মাথার ওপর ছাউনি নেই বললেই চলে। বৃষ্টি হলে খাটের নিচে বসে থাকতে হয়। এই দৃশ্য বাস্তবতা নয়, যেন একটি কবিতার মর্মস্পর্শী ছবি।


জলিল উদ্দিন (৩৫) জন্মগতভাবে প্রতিবন্ধী। শারীরিকভাবে অক্ষম হওয়ায় স্বাভাবিক চলাফেরা কিংবা কাজকর্ম করার সামর্থ্য নেই। চিকিৎসার সামর্থ্য তো দূরের কথা, ওষুধ কেনার টাকাও নেই এই পরিবারের কাছে।

জমিনা বেওয়া (৬৫) জলিল উদ্দিনের মা। নিজেই অসুস্থ, শরীরে রোগ বাসা বেঁধেছে বহু আগেই। তবুও পরিবারটিকে আগলে রেখেছেন বুক ভরে। মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে, কৃষিজমিতে শ্রম দিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়েই চলতে হয় পুরো পরিবার।

আসিমন বেওয়া (৮৫) জমিনার মা, অর্থাৎ জলিল উদ্দিনের নানী। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন বিছানায় মৃত্যুর প্রহর গুনছেন। অসুস্থ শরীরে কোনো চিকিৎসা নেই, কেবল চোখের জলে দিন পার করেন তিনি।

জমিনা বেওয়া বলেন, “নিজের শরীর তো আর চলে না ঠিকমতো, তাও মোর ছেলে আর মায়েরে নিয়া লড়তাছি। কেউ কিছু দেয় না, কেউ দেখে না। মোর ছেলের চিকিৎসা, মায়ের ওষুধ সব আমার ঘাড়ে। আমিই মরি না কেন আল্লাহ জানে।”

তার চোখে জল, গলায় কাঁপুনি কিন্তু মনোবলে চিড় ধরেনি। তিনি চায় না তার ছেলে আর মা মানুষের মুখে খাবার চেয়ে বাঁচুক। তিনি চান “একটু সহযোগিতা, একটু দয়া।”

পরিবারের প্রধান ও একমাত্র পুরুষ ব্যক্তি হাফেজ উদ্দিন মারা গেছেন দুই মাস আগে। তার মৃত্যু যেন এই পরিবারকে অন্ধকারে ফেলে দিয়েছে। তিনি জীবিত থাকাকালে পরিবারকে কোনও রকমে টেনে নিয়ে যেতেন। রেখে গেছেন ৮ শতক জমি, কিন্তু সেই জমির ওপর যে কুঁড়েঘর, সেটি এখন বসবাসেরও অযোগ্য। ছাদের ফাঁক দিয়ে বৃষ্টি পড়ে, দেয়ালে ফাটল। বৃষ্টির সময় খাটের নিচে বসে থাকতে হয়, মাথার ওপর কাগজ বা প্লাস্টিক টাঙিয়ে।


স্থানীয় বাসিন্দা অনিল চন্দ্র বলেন, “আমি এই পরিবারটিকে ছোটবেলা থেকে দেখছি। এখন চোখের সামনে এদের এই অবস্থাটা মেনে নেওয়া যায় না। সরকারের দৃষ্টি না পড়লে হয়তো একদিন আমরা এই তিনজনকেই হারাব।”


এনামুল হক ও সাকিম মিয়া বলেন, “আমরা চাই সরকারের হস্তক্ষেপ হোক। অন্তত একটা ঘর, একজন চিকিৎসক, আর একটু খাবার—তাদের বাঁচিয়ে রাখতে পারে।”


সরকার ও সমাজের প্রতি আবেদন এই পরিবারের অবস্থা দেখে চোখের জল সংবরণ করা যায় না। সরকারিভাবে একটি টিনের ঘর, প্রতিবন্ধী ছেলের চিকিৎসার জন্য আর্থিক অনুদান, বৃদ্ধার ওষুধ ও খাবারের ব্যবস্থা, আর জমিনা বেওয়ার জন্য একটি মাসিক ভাতা—এইটুকু সহায়তা দিলেই পরিবারটি বেঁচে উঠতে পারে।

এমন হাজারো পরিবার এই দেশের গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে রয়েছে, কিন্তু এ পরিবারটির কথা বিশেষভাবে বলতেই হচ্ছে কারণ তারা হেরে যায়নি, এখনও প্রতিদিন যুদ্ধ করছে। জীবনের যুদ্ধে যে মা নিজের পা ধরে রাখতে পারেন না, তিনি তার ছেলে আর বৃদ্ধা মায়ের মুখে এক চামচ ভাত তুলে দিতে পারেন এটা শুধু কষ্টের নয়, এক মহামানবীর উদাহরণ।

অর্থনীতি বিভাগের অন্যান্য খবর

 Somoyer Kotha
Follow Us

৪র্থ তলা, হাউজ# ২৭, রোড# ১ ব্লক# এ বনশ্রী , রামপুরা, ঢাকা।

সম্পাদক
মোজাম্মেল দিলন

প্রকাশক
সবার কথা মিডিয়া লিমিটেড
সবার কথা মিডিয়া লিঃ এর একটি প্রতিষ্ঠান।

নিউজ
ফোনঃ +৮৮ ০২২২৪৪০৬০৭০
Email: sobarkothabdnews@gmail.com

বিজ্ঞাপণ
ফোনঃ +৮৮ ০২২২৪৪০৬০৭০
Email: sobarkothabdnews@gmail.com

©২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || sobarkotha.com

শিরোনাম আমরা এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়াব, প্রশ্ন সোহাগের সন্তানদের। শিরোনাম ছাত্রদলের ৯ নেতার পদত্যাগ শিরোনাম হই হই রই রই, চাঁদাবাজ গেলি কই স্লোগানে উত্তাল সিরাজগঞ্জ শিরোনাম ছেলের পরকীয়া ঠেকাতে মা ফোন করে বলেন বিমানে বোমা শিরোনাম আলোচিত সোহাগ হ*ত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫ শিরোনাম উত্তাল সাগরে ট্রলারডুবি: ৯ জেলে জীবিত উদ্ধার, নিখোঁজ ৩