ঢাকা, ০১ জুলাই, ২০২৫
মোঃনয়ন ইসলাম মানজার , রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতাঃ :
প্রকাশিত : ১০:৩৮ এএম, ২২ জুন ২০২৫
Digital Solutions Ltd

নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও নতুন বাঁধা বৈরী আবহাওয়া,  একের পর এক নিষেধাজ্ঞা ও প্রাকৃতিক দূর্যোগে  দিশেহারা উপকূলের জেলেরা

প্রকাশিত : ১০:৩৮ এএম, ২২ জুন ২০২৫

নিষেধাজ্ঞা শেষ হলেও নতুন বাঁধা বৈরী আবহাওয়া,  একের পর এক নিষেধাজ্ঞা ও প্রাকৃতিক দূর্যোগে  দিশেহারা উপকূলের জেলেরা

মোঃনয়ন ইসলাম মানজার , রাঙ্গাবালী (পটুয়াখালী) উপজেলা সংবাদদাতাঃ :

গত ১২ জুন, ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে মাছ ধরার অনুমতি মিললেও এখনো স্বস্তি ফেরেনি উপকূলের হাজারো জেলে পরিবারে। বঙ্গোপসাগরে বৈরী আবহাওয়ার কারণে অনেকে সমুদ্রে নামতেই পারেননি। আবার যারা গিয়েছেন, তাদের অনেকেই ফিরেছেন খালি হাতে। ফলে জেলেদের জীবনে জমেছে হতাশা, বাড়ছে ঋণের বোঝা। বৈরী আবহাওয়া আর একের পর এক সরকারি নিষেধাজ্ঞায় দিশেহারা উপকূলের হাজারো জেলে পরিবার।

৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন—এবার রূপালী ইলিশে ভরবে তাদের জাল, ফিরবে সুখের দিন। কিন্তু সাগরে পা দিতেই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঝড়ো হাওয়া আর উঁচু ঢেউ। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী, কলাপাড়ার জেলেরা জানিয়েছেন, অনেকে এখনও সাগরে নামার ঝুঁকি নিতে পারছেন না।
রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজের জেলে রফিক হাওলাদার বলেন, পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকার বাজার করে ১৫ দিনের উদ্দেশ্যে গভীর সমুদ্রে পারি দিয়েছিলাম। কিন্তু সাগরে মাছ নাই। ঢেউয়ের জন্য জালই ঠিকভাবে ফেলা যায় না, মাছ থাকবেইবা কি করে? তিন-চার বার জাল ফেলছি। প্রতিবারই একই অবস্থা। তাই সমুদ্র থেকে জাল উঠিয়ে চলে আসছি।
তবে রাঙ্গাবালী উপজেলা মেরিন ফিশারিজ অফিসার এস এম শাহাদাত হোসেন রাজু জানান, নিষেধাজ্ঞার পর সাগরে মাছ থাকার সম্ভাবনা থাকলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে জেলেরা ঠিকমতো জাল ফেলতে পারছেন না। ফলে কাঙ্ক্ষিত মাছ ধরা পড়ছে না। আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে মাছ ধরা বাড়বে বলে আমরা আশা করছি।”

নিষেধাজ্ঞা আর দুর্যোগে বছরজুড়ে বিপর্যস্ত জেলেরা:
উপকূলীয় অঞ্চলে বছরে গড়ে ৮–৯ মাস জেলেদের মাছ ধরা কার্যত বন্ধ থাকে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও ঘূর্ণিঝড়, নিম্নচাপ, কালবৈশাখীসহ নানা দুর্যোগে প্রায়ই বন্ধ হয়ে যায় সমুদ্রযাত্রা। প্রতিবছর ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত সামুদ্রিক মাছ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকে — মোট ৫৮ দিন। ১৩ অক্টোবর – ৩ নভেম্বর: মা ইলিশ সংরক্ষণে ২২ দিন।  মার্চ ও এপ্রিল দুই মাস পটুয়াখালীর তেতুলিয়া নদী সহ দেশের ৬ অভায়শ্রমে ইলিশের প্রজননকেন্দ্রগুলোতে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকে। ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৮ মাস জাটকা (ছোট ইলিশ) ধরায় নিষেধাজ্ঞা চলে। যদিও এটি অঞ্চলভেদে কার্যকর হয়, তবুও বাস্তবে উপকূলের বড় একটা অংশেই এই সময় মাছ ধরা বন্ধ থাকে।
সব মিলিয়ে বছরে প্রায় ২৫০–২৭০ দিন পর্যন্ত কোনো না কোনো কারণে মাছ ধরা বন্ধ থাকে উপকূলীয় এলাকায়। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে পটুয়াখালী, ভোলা ও বরগুনার  নিম্নআয়ের মাছনির্ভর পরিবারগুলোর ওপর।
উপকূলীয় অঞ্চলে এভাবেই গড়ে প্রতি বছর কয়েক লাখ পরিবার আয়হীন সময় পার করেন।

আয়ের পথ বন্ধ, ঋণের বোঝা বাড়ছে:
পটুয়াখালী জেলার সমুদ্রসংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলে প্রায় দেড় লাখ জেলে রয়েছেন। বারবার নিষেধাজ্ঞা আর আবহাওয়ার কারণে আয় না থাকায় অনেক পরিবারই ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। খাদ্য সহায়তা অপ্রতুল হওয়ায় জীবন চালানোই হয়ে উঠেছে কঠিন। রাঙ্গাবালী বড়বাইশদিয়ার জেলে আলাউদ্দিন মাঝি বলেন, “জেলে পেশাটারে অনেকেই এখন ছাড়তে চাইতেছে। কিন্তু ছাড়বে কেমনে, অন্য কাজ তো নাই। অন্য কোন কামকাইজ পাইলে মাছ ধরা ছাইড়া দিমু।'
রাঙ্গাবালীর কোড়ালীয়া মৎস্য ঘাটের  জেলে হারুন মাঝি বলেন, '৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা ছিলো, তহন ঘরে বসে আছিলাম। ঠিকমতো বাজার সদায় করতে পারি নাই। এ্যাহন আবার আবহাওয়ায় জ্বালাইতেছে। একটার পর একটা ঝামেলা লাইগাই আছে। এরম অইলে কেমনে বাঁচমু। মাছ ধরা ছাইড়াইবা কি করমু। ছোটকাল থেইকা শিখছি এইডা, অন্যকিছু পারিওনা। মাছ ধরতে না পারায় মহাজনও আমাগো টাকা দিতে পারে নাই। তাই  আবার ঋণ করে নিজের সংসারের জন্য  বাজার কিনছি। এইভাবে আর কত? মরি বাঁচি মাছ ধইরাই খাওয়া লাগবো। তাই চিন্তা করছি আবহাওয়া যতই খারাপ হউক, কালই সাগরে যামু।'

মানুষ না বাঁচলে, মাছও টিকবে না:
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন ফিশারিজ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলেপেশা নিয়ে দীর্ঘদিন গবেষণা করা সহযোগী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, “আমাদের উপকূলীয় অর্থনীতি দীর্ঘদিন ধরে মূলত প্রাকৃতিক সম্পদনির্ভর এবং অরক্ষিত। জেলেদের জীবন-জীবিকা এখন মূলত অনির্দেশ্য আবহাওয়ার সঙ্গে একটি অনিয়মিত ছকের মধ্যে আটকে আছে। সরকার বছরে কয়েক দফা মাছ ধরা বন্ধ রাখে — যা পরিবেশ ও প্রজননের দিক থেকে প্রয়োজনীয়। কিন্তু এই সময়টিতে জেলেদের জন্য বিকল্প জীবিকা, পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা বা সহজ শর্তে ঋণপ্রাপ্তির কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। ফলে তারা অনেকে মহাজনের কড়চায় জড়িয়ে পড়ে আরও নিঃস্ব হয়ে পড়েন।”
তিনি বলেন, “দীর্ঘমেয়াদে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জন্য টিকে থাকার পথ একটাই—প্রাতিষ্ঠানিক সহায়তা। আমাদের উচিত হবে জেলেদের জন্য একটি ‘লাইভলি হুড সিকিউরিটি প্যাকেজ’ নিশ্চিত করা, যাতে নিষেধাজ্ঞার সময় তাদের খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা ও বিকল্প আয়ের উৎস স্থায়ীভাবে গড়ে তোলা যায়। একই সঙ্গে জলবায়ু সহনশীল মাছ চাষ, উপকূলীয় কৃষি বা অন্যান্য পেশায় প্রশিক্ষণ দিয়ে ধাপে ধাপে তাদের জীবনমান উন্নয়নের উদ্যোগ নিতে হবে।”
অধ্যাপক মীর আলীর মতে, শুধু নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ইলিশ বা সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষা সম্ভব নয়, যদি মানুষ বাঁচতে না পারে। “মানুষ বাঁচলেই প্রকৃতি বাঁচবে। সাগরের মাছ রক্ষার আগে সাগরের মানুষকে রক্ষা করতে হবে।”

 

পরিবেশ বিভাগের অন্যান্য খবর

 Somoyer Kotha
Follow Us

৪র্থ তলা, হাউজ# ২৭, রোড# ১ ব্লক# এ বনশ্রী , রামপুরা, ঢাকা।

সম্পাদক
মোজাম্মেল দিলন

প্রকাশক
সবার কথা মিডিয়া লিমিটেড
সবার কথা মিডিয়া লিঃ এর একটি প্রতিষ্ঠান।

নিউজ
ফোনঃ +৮৮ ০২২২৪৪০৬০৭০
Email: sobarkothabdnews@gmail.com

বিজ্ঞাপণ
ফোনঃ +৮৮ ০২২২৪৪০৬০৭০
Email: sobarkothabdnews@gmail.com

©২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || sobarkotha.com

শিরোনাম ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগদানের পরদিনই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে: হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী শিরোনাম তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভিতরে প্রবেশ পথে ময়লার ভাগাড়।  পরিবেশ দুষিত।  শিরোনাম লালমোহন জুলাই আগস্ট শহীদ সাকিব এর পরিবারের উপরে হামলার অভিযোগ  শিরোনাম ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে বাকৃবিতে সচেতনতামূলক সেমিনার শিরোনাম মুরাদনগরে ধর্ষণ: দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বাকৃবিতে ছাত্রফ্রন্টের বিক্ষোভ শিরোনাম বেরোবিতে নিয়োগ জালিয়াতি, আওয়ামী পন্থী  শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্তে উচ্চপর্যায়ের কমিটি