ফাতেমা সোনিয়া :

দুই দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। ৮০ বছরের এই নেত্রী দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, লিভার সিরোসিস, কিডনি জটিলতা সহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। এ কারণে তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি না হলেও নতুন কোনো অবনতি ঘটেনি।বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী শুক্রবার সমকালকে জানান, “চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। চিকিৎসকরা তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখছেন। সিসিইউতে যাওয়া সম্ভব না হওয়ায় আমরা গ্লাস越র বাইরে থেকে দেখেছি।”

এদিকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি দেশবাসীর কাছে নেত্রীর সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যেন কোনো ঘাটতি না থাকে, সেজন্য প্রয়োজনীয় সব সহায়তা দিতে সংশ্লিষ্ট সবাই প্রস্তুত থাকুক। গণতান্ত্রিক উত্তরণের এই সময়ে তাঁর সুস্বাস্থ্য দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জাতির জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।”

শুক্রবার বিকেলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী খালেদা জিয়া দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। তাঁরা সিসিইউর ভেতরে যাননি, বরং বাইরে থেকে দেখা করেছেন। ফখরুল ইসলাম বলেন, “তাঁর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত সংকটময়। দলের পক্ষ থেকে দেশের মানুষ ও মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে দোয়ার আবেদন জানিয়েছি। বাদ জুমার নামাজে বিশেষ দোয়া মাহফিল আয়োজন করেছি, যাতে আল্লাহতালা ম্যাডামকে সুস্থ করে ফেরাতে পারেন।”

দলের একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার জানান, “আজও আমরা নিয়মিত হাসপাতালে যাচ্ছি। ম্যাডামের অবস্থা আগের মতোই। ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. জাহিদ হোসেন সার্বক্ষণিক থাকছেন। চিকিৎসকরা প্রতিদিন বৈঠক করে নতুন করণীয় ঠিক করছেন।”

চিকিৎসার বিশেষ আয়োজন হিসেবে, চিকিৎসকদের পরামর্শে খালেদা জিয়ার জন্য প্রতিদিন গুলশানের বাসা থেকে খাবার পরিবেশিত হচ্ছে। তাঁর সঙ্গে ছোট পুত্রবধূ সৈয়দা শর্মিলা রহমান, গৃহপরিচারিকা ফাতেমা ও স্টাফ রূপা আক্তার সার্বক্ষণিক থাকছেন।চিকিৎসা সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলো দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গ্রহণ করা হচ্ছে। লন্ডন থেকে ডা. জোবাইদা রহমান এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে জনস হপকিনস হাসপাতালের বিশেষজ্ঞরা ভার্চুয়ালি বোর্ড বৈঠকে অংশ নিচ্ছেন।বৃহস্পতিবার দুপুরে সংক্রমণের আশঙ্কায় খালেদা জিয়াকে সিসিইউতে নেওয়া হয়। মেডিকেল বোর্ডের এক সদস্য জানান, “ম্যাডামের নিউমোনিয়া হয়েছে। বয়সের কারণে সেরে ওঠার সময় লাগবে। চিকিৎসকরা তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখছেন। সব পরীক্ষার মাধ্যমে নতুন করণীয় ঠিক করা হচ্ছে।”দলের পক্ষ থেকে সারাদেশে খালেদা জিয়ার আশু রোগমুক্তির জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাতের আহ্বান জানানো হয়েছে। নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে শুক্রবার বাদ জুমা বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রধান অতিথি ছিলেন।আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল হাসপাতালে গিয়ে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন। তিনি জানান, “ম্যাডামের অবস্থা ভালো না। সবাই দোয়া করবেন।”

এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা সংবাদ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “প্রধান উপদেষ্টা দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার চিকিৎসা ও সুস্থতার জন্য যে মানবিক সহানুভূতি দেখিয়েছেন, তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।”

বর্তমানে হাসপাতাল প্রাঙ্গণে দলের নেতাকর্মী ও সিনিয়র নেতা-বৃন্দ সার্বক্ষণিক অবস্থান করছেন এবং দেশবাসীর কাছে দোয়ার আহ্বান অব্যাহত রয়েছে।