আমতলীতে পল্লী চিকিৎসককে নির্যাতন করে হত্যার অভিযোগ। পুলিশ ময়না তদন্ত ও মামলা নেয়নি।
বরগুনার আমতলী সদর ইউনিয়নের শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক পল্লী চিকিৎসক মোঃ শাহীন খাঁনকে উপজেলা বিএপির এক প্রভাবশালী নেতার নির্দেশে তার সহযোগী কাজল মৃধা ও ইসাহাক মৃধা ও সাহারুল নির্যাতন করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত শাহীন খাঁনের ছেলে বায়েজিদ খাঁন চয়ন এমন অভিযোগ করেছেন। চয়ন আরো অভিযোগ করেন আমতলী থানার ওসিকে তার বাবার লাশের ময়না তদন্ত করা ও মামলা নেয়ার অনুরোধ করা হলেও তিনি কিছুই করেনি। উল্টো ওসি মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ এ বিষয়ে তাকে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন। ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার খুরিয়ার খেয়াঘাট এলাকায় সোমবার রাতে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলার সদর ইউনিয়ন শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক পল্লী চিকিৎসক শাহীন খানকে খুরিয়ার খেয়াঘাট এলাকার জালাল ফকিরের স্বমিলের ভাড়াটিয়া মালিক কাজল মৃধা গত রবিবার রাত আড়াইটার দিকে রোগী দেখার কথা বলে ডেকে নেয়। পরে আমতলী-কুয়াকাটা মহাসড়কের সাকিব খাঁনের বাসার পাশে নিয়ে তাকে কাজল মৃধা,ইসাহাক মৃধা ও জালাল ফকিরের বাসার ভাড়াটিয়া সাহারুলসহ ৮-১০ জনে মারধর করে। ডাক চিৎকারের শব্দ শুনে শাহীন খাঁনের চাচাতো ভাইয়ের ছেলে সাকিব খাঁন বাহিরে বের হয়। পরে সড়কের ওপরে কাজল মৃধা, সাহারুল ও তার স্ত্রীকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে আসে। ওই সময় কাজল মৃধা পল্লী চিকিৎসক শাহীন খাঁনকে লাথি মেরে রাস্তার পাশে ফেলে দেয় এবং লাঠি দিয়ে মারতে দেখে। এ সময় সাকিব খাঁন তাকে (কাজল) বাঁধা দেয়। সোমবার সকালে আহত শাহীন খাঁনকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ হুমায়ুন আহমেদ সুমন তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরণ করেছেন। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার রাত ৮ টার দিকে তিনি মারা যান। এদিকে ওইদিন রাত দুইটার দিকে শাহীন খানের মরদেহ আমতলী থানায় নিয়ে আসে। শাহীন খাঁনের ছেলে বায়েজিদ খাঁন চয়নের অভিযোগ আমতলী থানায় ওসি মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফকে লাশের ময়না তদন্ত করানো ও মামলা নেয়ার অনুরোধ করলে তিনি মামলা নেয়নি। উল্টো তাকে এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন এবং দ্রæত লাশ দাফনের নির্দেশ দেন। সোমবার দুপুরে ময়না তদন্ত ছাড়াই নিহতের মরদেহ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। শাহীন খানের মৃত্যুর খবর পেয়ে কাজল মৃধা ও তার ভাই ইসাহাক মৃধা ও শাহারুল পালিয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয়রা এ ঘটনার বিচার দাবী করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সাকিব খাঁন বলেন, ঘটনার দিন রবিবার রাত তিনটার দিকে আমার বাড়ীর একটু সামনে ডাকাডাকির শব্দ শুনতে পাই। পরে আমি ঘর থেকে বের হই। আমার আসার শব্দ পেয়ে কিছু লোক দৌড়ে পালিয়ে যায়। আমি এসে দেখি কাজল মৃধা আমার চাচা শাহীন খাঁনকে লাথি দিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে দিচ্ছে এবং লাঠি দিয়ে পিটান দেয়। আর পাশে জালাল ফকিরের বাসার বাড়াটিয়া শাহারুল ও তার স্ত্রী দাড়িয়ে আছে। আমি তাকে (কাজল মৃধা) বাঁধা দেই। পরে আমি কাজল মৃধার কাছে চাচাকে মারধরে বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান চাচা (শাহীন খান) ঠেলাগাড়ী চুরি করেছে। আমার চাচাকে আমি তার বাড়ীর দিয়ে এগিয়ে দিয়ে চলে আসি। এমন মুহুর্তে শুনতে পাই চাচাকে কাজল মৃধা আবারো মারধর করছে। আমি দৌড়ে গিয়ে চাচাকে ধরলে কাজল মৃধা , শাহারুল ও তার স্ত্রী পালিয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, ঘটনাস্থলে একটি ঠেলাগাড়ী ও টমটম ছিল। ওই গাড়ী দুটি আমি জালাল ফকিরের স্ব-মিলে রেখে আসি। কিন্তু সকালে গিয়ে ওই গাড়ী দুটি মিলে পাইনি। কাজল মৃধা সরিয়ে ফেলেছে।
নিহত শাহীন খানের স্ত্রী শিউলী বেগম বলেন, রাতে আমার স্বামী আমাকে এসে বলেছে কাজল মৃধা আমাকে মারধর করেছে। আমি ওকে ছাড়বো না। আমার বুকে ব্যথা করছে। পরে তিনি ঘুমিয়ে যান। সকালে বুকে বেশী ব্যথা অনুভব করলে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তিনি আরো বলেন, আমতলী উপজেলা বিএনপির এর নেতার নির্দেশে আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
নিহত শাহীন খানের ছেলে বায়েজিদ খান চয়ন বলেন, আমার বাবাকে পরিকল্পিতভাবে কাজল মৃধা তার ভাই ইসাহাক মৃধা, শাহারুলসহ ১০-১২ জনে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। তিনি আরো বলেন, আমতলী থানায় ওসিকে আমার বাবার ময়লা তদন্ত করতে এবং মামলা নিতে অনুরোধ করেছিলাম কিন্তু তিনিতো তা করেননি উল্টো আমাকে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছেন। আমি আমার বাবার হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবী করছি। আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ হুমায়ূন আহমেদ সুমন বলেন, শাহীন খাঁনকে কিছু লোক হাসপাতালে নিয়ে আসেন। কিন্তু তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। তার শরীর দুর্বল ছিল। মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিল। আমরা অবস্থা বেগতিক দেখে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রেরন করেছি। শুনেছি তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
আমতলী থানার ওসি মোঃ আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, চিকিৎসকের দেয়া মৃত্যু সার্টিফিকেট অনুসারে মরদেহের ময়না তদন্ত করা ও মামলা নেয়া হয়নি। তবে নিহতের ছেলে ময়না তদন্ত করতে বলেছে আপনী করেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সার্টিফিকেটের বাহিরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সহকারী পুলিশ সুপার (আমতলী-তালতলী ) সার্কেল তারিকুল ইসলাম মাসুম বলেন, শাহীন খাঁনের মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়ায় ময়না তদন্ত করা হয়নি এবং মামলাও নেয়া হয়নি।
৪র্থ তলা, হাউজ# ২৭, রোড# ১ ব্লক# এ বনশ্রী , রামপুরা, ঢাকা।
সম্পাদক
মোজাম্মেল দিলন
প্রকাশক
সবার কথা মিডিয়া লিমিটেড
সবার কথা মিডিয়া লিঃ এর একটি প্রতিষ্ঠান।
নিউজ
ফোনঃ +৮৮ ০২২২৪৪০৬০৭০
Email: sobarkothabdnews@gmail.com
বিজ্ঞাপণ
ফোনঃ +৮৮ ০২২২৪৪০৬০৭০
Email: sobarkothabdnews@gmail.com
©২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || sobarkotha.com