ঢাকা, ১৮ মে, ২০২৪
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
Publish : 11:05 AM, 30 March 2024.
Digital Solutions Ltd

দক্ষিণ এশিয়ার দেশে দেশে প্রকট রাজনৈতিক সংকট

Publish : 11:05 AM, 30 March 2024.
দক্ষিণ এশিয়ার দেশে দেশে প্রকট রাজনৈতিক সংকট

দক্ষিণ এশিয়ার দেশে দেশে প্রকট রাজনৈতিক সংকট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

বৈশ্বিক রাজনৈতিক মেরূকরণের প্রভাব পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও। একই সঙ্গে এ অঞ্চলের আটটি দেশের বেশির ভাগই গণতন্ত্র চর্চায় পিছিয়ে পড়ছে। গণতান্ত্রিক সূচকে পিছিয়ে পড়ার রেকর্ড তাই বলছে। কোনো কোনো দেশে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক চর্চাও প্রায় অনুপস্থিত। এসব দেশের নির্বাচন নিয়েও পশ্চিমা দেশগুলো প্রশ্ন রাখছে। একদিকে বৈশ্বিক রাজনৈতিক মেরূকরণ, অন্যদিকে দেশগুলোতে ‘জবাবদিহি’মূলক সরকার না থাকায় পরিস্থিত ক্রমেই জটিল হচ্ছে।

ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ। কিন্তু সেখানে এখন গণতন্ত্রের জায়গা ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে। আফগানিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় অনির্বাচিত সরকার। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন হয়েছে। এ দুই দেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হওয়া নিয়ে প্রশ্ন আছে। নেপাল ও মালদ্বীপে বিরাজ করছে রাজনৈতিক উত্তেজনা। অর্থনৈতিক সংকটে অপরূপ সৌন্দর্যের ভুটান। মিয়ানমার দক্ষিণ এশিয়ার না হলেও এ অঞ্চল-সংলগ্ন। সেখানে জান্তার বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে জনতা। এ অঞ্চলের সরকারগুলোর নাজুক অবস্থানের সুযোগ নিচ্ছে চীন ও ভারত। তবে আর্থিক সক্ষমতা কয়েক গুণ বেশি হওয়ায় প্রভাব বিস্তারে সুবিধাজনক অবস্থানে বেইজিং। স্থায়ী মিত্র পাকিস্তান ছাড়াও এখন চীনের দিকে ঝুঁকছে ভারত বলয়ের শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল ও ভুটান।

লন্ডনভিত্তিক দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) প্রকাশিত ২০২৩ সালের গণতন্ত্র সূচকে ১৬৭ দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে আফগানিস্তানের অবস্থান ১৬৭তম। দুই ধাপ অবনমনে বাংলাদেশ ৭৫তম, তার আগে শ্রীলঙ্কা ৭০তম। বাংলাদেশের পরে ভুটান ৮১তম, নেপাল ৯৮তম ও পাকিস্তানের অবস্থান ১১৮তম। আর ৪১তম অবস্থানে ভারত।

লিউই ইনস্টিটিউটের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক নিবন্ধে কানাডার থম্পসন রিভার্স ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ও দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ সায়রা বানো লিখেছেন, দক্ষিণ এশিয়ায় গণতন্ত্র উদ্বেগজনক পতনের সম্মুখীন হচ্ছে। সূচকেও ধারাবাহিক অবনমন ঘটছে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও মালদ্বীপের সাম্প্রতিক নির্বাচনের পাশাপাশি ভারতের আসন্ন নির্বাচন ঘিরে যা হচ্ছে, তা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চলমান অবক্ষয়ই তুলে ধরছে। নিবন্ধের ভাষ্য অনুযায়ী, অঞ্চলব্যাপী গণতান্ত্রিক নীতির প্রতি এ ধরনের চ্যালেঞ্জ অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করে। নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধির ফলে চরম দারিদ্র্য, জলবায়ু পরিবর্তনসহ জরুরি সমস্যা মোকাবিলায় সম্মিলিত রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়। চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ দক্ষিণ এশিয়ায়। গণতান্ত্রিক পশ্চাৎপসরণ থেকে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা চ্যালেঞ্জকে আরও কঠিন করে তোলে। আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সুশাসন অপরিহার্য বলে মনে করেন সায়রা বানো।

বাড়ছে চীনের প্রভাব

ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় মালদ্বীপ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করছে চীন। ভারতের ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের সঙ্গে দিল্লির ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা সহযোগিতার দিকে সতর্ক দৃষ্টি বেইজিংয়ের। চীনের জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, চলতি মাসে চীনের সামরিক বাহিনীর একটি প্রতিনিধি দল মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। তারা তিন দেশেরই প্রতিরক্ষা প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার পাশাপাশি আঞ্চলিক নিরাপত্তার উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করে।

ইতোমধ্যে ভারত মহাসাগরের দ্বীপ রাষ্ট্র মালদ্বীপে অবস্থানরত ভারতীয় সৈন্যদের প্রত্যাহারে নয়াদিল্লিকে বাধ্য করেছে মুইজ্জুর সরকার। নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দাহাল প্রচণ্ড চলতি মাসের শুরুতে দেশটির চীনপন্থি কমিউনিস্ট পার্টির নেতা কেপি শর্মা অলির সঙ্গে জোট করেছেন। দুই বৃহৎ কমিউনিস্ট পার্টির জোট মালদ্বীপ থেকে ভারতের পশ্চাৎপসরণের পরপরই ঘটল। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগেও অংশ নিয়েছে নেপাল। করোনা মহামারিতে পর্যটন খাত প্রবল ধাক্কা খাওয়ার পর নেপালের অর্থনীতি আরও চীননির্ভর হয়েছে। ২০২৩ সালের শেষের দিকে নেপালের বৈদেশিক ঋণ ছিল ৩৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে চীনেরই ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।

কাঠমান্ডুভিত্তিক রাজনৈতিক ভাষ্যকার যুবরাজ ঘিমিরে নিক্কি এশিয়াকে বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হলেও ভারত সম্পর্কে দেশটির কিছু রাজনৈতিক দলের মধ্যে তীব্র বিতৃষ্ণা রয়েছে। অনেক দল ভারতকে বিশ্বাস করে না এবং ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রায়ই চীনের প্রতি ঝুঁকে পড়ে।

হংকংভিত্তিক সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের এক নিবন্ধে বলা হয়, ভারতঘেঁষা ভুটানও ‘আক্রমণাত্মক চীনের’ সঙ্গে সীমান্ত বিরোধের অবসান চাইছে। যদিও ভুটান অর্থনৈতিকভাবে ভারতের ওপর নির্ভরশীল। তবে দিল্লি উদ্বিগ্ন যে, তার প্রতিবেশী দেশটিতে বেইজিংয়ের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি ও প্রভাবের মধ্যে থিম্পু-দিল্লির মিত্র থাকবে কিনা!

ভারতের দুটি গুরুত্বপূর্ণ ত্রিদেশীয় সীমান্ত পয়েন্টের সঙ্গে জড়িত ভুটান ও চীন। এর একটি ভারতের পশ্চিমের ডোকলাম; অন্যটি পূর্বের ম্যাকমোহন লাইন, যা চীন ও ভারত সীমান্তকে পৃথক করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ছোট রাষ্ট্র হলেও ভুটানে চীনের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতি ও প্রভাব ভারতের নিরাপত্তা স্বার্থের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

অশান্ত ভারত

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকার ধর্মীয় ও অন্যান্য সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক নীতি অব্যাহত রেখেছে। মণিপুর রাজ্যসহ অনেক জায়গায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বেড়েছে। মণিপুরে জাতিগত সংঘর্ষে দেড় শতাধিক প্রাণহানি হয়েছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যের পুলিশ সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে অপরাধের সঠিক তদন্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মতো সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ এবং নারী-শিশু, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী ও দলিতদের অধিকার রক্ষার সংস্থাগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে ব্যর্থ। জম্মু ও কাশ্মীরে স্বাধীন মতপ্রকাশ, শান্তিপূর্ণ সমাবেশসহ অন্যান্য অধিকার সীমিত।

হুমকি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দিয়ে সুশীল সমাজ, সাংবাদিক ও প্রতিপক্ষের কণ্ঠ স্তব্ধ করার প্রচেষ্টা জোরদার করেছে সরকার। এমন প্রেক্ষাপটে এপ্রিল থেকে জুনের শুরু পর্যন্ত সংসদ নির্বাচন হবে। বিরোধী দলগুলোকে কোণঠাসা অবস্থান থেকেই নির্বাচনে লড়তে হচ্ছে।

রাজনৈতিক সংকট শ্রীলঙ্কায়

চলতি বছরের শেষ দিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কথা থাকলেও কাটছে না অনিশ্চয়তা। প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে ক্ষমতা ধরে রাখতে চান। তবে ভোটাররা আমূল পরিবর্তনের পক্ষে। ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কা ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত হওয়ার পর এই প্রথম নির্বাচন হবে। খাদ্য, জ্বালানিসহ প্রয়োজনীয় পণ্যের তীব্র ঘাটতির মধ্যে দেশটি দেউলিয়া হয়ে যায়। এর পর প্রতিবাদের মধ্যে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে পালিয়ে গিয়ে পদত্যাগ করেন। ক্ষমতায় আসেন প্রবীণ রাজনীতিক বিক্রমাসিংহে এবং তিনি অর্থনৈতিক সংকট অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন।

আইএমএফ বলেছে, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি করছে। ২০২২ সালের ৭০ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি গত মাসে ৫ দশমিক ৯ শতাংশে নেমে এসেছে। তবে দমনমূলক নীতি ও অপর্যাপ্ত সামাজিক সুরক্ষা অনেক নাগরিককে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

আফগানিস্তানে দমনপীড়ন

২০২১ সালে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর থেকে আফগান অর্থনীতি ২৭ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউএনডিপি। দ্বিগুণ বেকারত্ব এবং জনসংখ্যার মাত্র ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ পেয়েছে। আর্থিক খাতগুলো ধসে পড়েছে। রপ্তানি বা সরকারি ব্যয়ের মতো অর্থনৈতিক কার্যকলাপের বড় কোনো উৎস নেই। কর্মসংস্থান ৬ শতাংশে নেমে এসেছে।

তালেবান সরকার ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, বিশেষ করে নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে। আফগানিস্তানই একমাত্র দেশ যেখানে নারী ও মেয়েরা মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষায় প্রবেশ করতে পারছে না। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, আফগানিস্তানে নারী ও মেয়েদের প্রতি নির্যাতনের ধরন লিঙ্গ নিপীড়নে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের সমান।

গত বছরের আগস্টে জাতিসংঘ জানায়, ২০২১ সালের আগস্ট থেকে বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং আটকের অন্তত ৮০০টি ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার ২১৮ জন।

আন্তর্জাতিক বিভাগের অন্যান্য খবর

 Somoyer Kotha
Follow Us

৪র্থ তলা, হাউজ# ২৭, রোড# ১ ব্লক# এ বনশ্রী।

সম্পাদক
মোজাম্মেল দিলন

প্রকাশক
সবার কথা মিডিয়া লিমিটেড
সবার কথা মিডিয়া লিঃ এর একটি প্রতিষ্ঠান।

নিউজ
ফোনঃ +৮৮ ০২২২৪৪০৬০৭০
Email: [email protected]

বিজ্ঞাপণ
ফোনঃ +৮৮ ০২২২৪৪০৬০৭০
Email: [email protected]

©২০২৩ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || sobarkotha.com

শিরোনাম রায়পুরায় নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রুবেল শিরোনাম ৬৫ দিনের চিন্তায় অন্ধকারাছন্ন জেলে পল্লী শিরোনাম তালতলীতে জমি নিয়ে বিরোধে নারীসহ পাঁচ জনকে কুপিয়ে জখম শিরোনাম আমতলীতে আড়াই শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শিরোনাম ওয়ারীতে বাথরুমে বালতির পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু শিরোনাম ৮নং ডাকাতিয়া ইউনিয়ন শ্রমিক দলের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন